ঈমানী খলিফা : পুরুষ না মহিলা?

গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে নারী বক্সিংয়ে সোনা জিতেছিলেন আলজেরিয়ার ইমানে খলিফা। তার শক্তি, তার গতি, প্রতিপক্ষকে হারানোর দৃঢ়তা— সবই যেন ছিল অতিরিক্ত। অনেকেই বলতে শুরু করে- সে কি আসলেই নারী?
স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে অলিম্পিক ভিলেজের ভেতরে… তাকে নিয়ে কথা চলছিলো। সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।
ইমানে খলিফার লিঙ্গ বিতর্কের জেরে এ বছর বিশ্ব বক্সিং ফেডারেশন জানিয়েছে, খলিফাকে জেনেটিক সেক্স টেস্ট দিতে হবে।
এখানেই শুরু হয়েছে আসল নাটক।
খলিফা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো পরীক্ষা দেবেন না।
উল্টো বক্সিং এসোসিয়েশনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছেন। আন্তর্জাতিক কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্ট বা CAS-এ তিনি দাবি করেন, তাকে নিয়ে এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। অন্য কাউকে পুরুষ বা নারী প্রমাণের জন্য সেক্স টেস্ট করা হয় না, তাকে কেন এই টেস্ট করতে হবে?
অন্যদিকে বিশ্ব বক্সিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বোরিস ভ্যান ডের ভুরস্ বলেছেন, বিশ্ব বক্সিংয়ের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতেই এই পরীক্ষা জরুরি।
অনেক নারী খেলোয়াড়কেই দেখতে পুরুষের মতো দেখায়। তাই সে আসলেই পুরুষ নাকি নারী এটা বোঝার জন্য ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত নারী অ্যাথলিটদেরকে জেন্ডার ভেরিফিকেশন টেস্ট নামে শারীরিক পরীক্ষা করা হতো। ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞরা নারী অ্যাথলিটদের ব্রেস্ট, যৌনাঙ্গ এবং পেলভিক এরিয়া হাত দিয়ে পরীক্ষা করতেন। এই পরীক্ষা অনৈতিক ও অপমানজনক মনে হওয়ায় এর বিকল্প খোঁজা হয়।
আশির দশক পর্যন্ত চলে ক্রোমোজোম টেস্ট। অ্যাথলিটের শরীরের কোষ নিয়ে দেখা হতো সেখানে XX ক্রোমোজোম আছে কি না। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছু মানুষের ক্রোমোজমে ভিন্নতা থাকতে পারে। কোষে XY থাকলেও সে আসলে নারী। এই পরীক্ষার ফলে অনেক নারীকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর বিকল্প এসেছে হরমোনাল টেস্ট। এই পদ্ধতিতে শরীরে টেস্টোস্টেরন বা ইস্ট্রোজেন কতটা আছে, সেটি পরিমাপ করা হয়। আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় কারো শরীরে ৫ ন্যানোমোলস পার লিটার-এর বেশি টেস্টোস্টেরন থাকলে তাকে পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে এই পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক আছে। টেস্টোস্টেরন কমবেশি হলেও নারী বা পুরুষ হতে পারে। বিষয়টি পরিচয়ের, এমন দাবি অনেকের।
নতুন করে এই বিতর্কে ঘি ঢাললেন ইমানে খলিফা।
ক্রীড়াজগত এখন CAS-এর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। আসন্ন বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ইমানে খেলতে পারবেন কিনা— সেটাই নির্ধারণ করবে এই রায়।
সোনাজয়ী এই আলজেরিয়ান বক্সার এখন শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং বিশ্বজুড়ে নারী-পুরুষ পরিচয় বিতর্কেরও কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।